education boards_1750755252.jpg

বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ড কয়টি ও কি কি? বোর্ডের ইতিহাস, দায়িত্ব-কার্যক্রম বিস্তারিত

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে দেয় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খল পাঠদান, পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট প্রদানে এদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে ১১টি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে, যাদের ইতিহাস, কাজের ধরন ও গুরুত্ব তুলে ধরা হলো এই পোস্টে।

 

শিক্ষা বোর্ডের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ডের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৪ সালে “East Bengal Secondary Education Board” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এরপর ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চাহিদা অনুযায়ী আরও বোর্ড গঠিত হয়। এভাবে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষা বোর্ডগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনামলে। তখন পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট প্রদান করত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) পশ্চিম পাকিস্তানের Lahore Board-এর অধীনে পড়ে।

🔸 কিন্তু দূরত্ব ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে প্রাদেশিক পর্যায়ে শিক্ষা বোর্ডের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

 

১৯৫৪: প্রথম শিক্ষা বোর্ডের সূচনা

"East Bengal Secondary Education Board" প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালে ঢাকায়, যা ছিল পূর্ব বাংলার প্রথম স্বতন্ত্র শিক্ষা বোর্ড।
এর মূল কাজ ছিল মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা পরিচালনা, পরীক্ষা গ্রহণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদারকি।

 

বাংলাদেশে শিক্ষা বোর্ড কয়টি?

বাংলাদেশে বর্তমানে ১১টি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড (General Education Board)
  • ১টি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (Madrasah Education Board)
  • ১টি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (Technical Education Board)

আরো পড়ুনঃ
বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলাম ২০২৫ – ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য ও বাস্তবায়ন বিশ্লেষণ

সাধারণ শিক্ষা বোর্ডসমূহ (১–৯): স্বাধীনতার পর শিক্ষা বোর্ডের পূনর্বিন্যাস ও সম্প্রসারণ

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার শুরু করে। শিক্ষাকে অঞ্চলভিত্তিক সহজতর ও মানসম্মত করতে নতুন নতুন শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয়

নিচে এক নজরে বোর্ডগুলোর প্রতিষ্ঠার সাল ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হলো:

বোর্ডের নামপ্রতিষ্ঠাকালসংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড১৯৬১সবচেয়ে পুরনো এবং প্রধান বোর্ড হিসেবে গঠিত হয়। শুরুতে এটি ছিল পুরো পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রক।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড১৯৬১উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার জন্য আলাদা বোর্ড প্রয়োজন হওয়ায় এটি গঠিত হয়।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড১৯৬২চট্টগ্রাম বিভাগের পূর্বাঞ্চলের জন্য গঠিত।
যশোর শিক্ষা বোর্ড১৯৬৩দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সুবিধার জন্য আলাদা করা হয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড১৯৯৫পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে গঠিত।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড১৯৯৯বরিশাল বিভাগে মানসম্মত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ড১৯৯৯সিলেট অঞ্চলের শিক্ষায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড২০০৬রংপুর ও উত্তরের আরও অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করে রাজশাহীর বোঝা কমায়।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড২০১৭ময়মনসিংহকে নতুন বিভাগ ঘোষণার পর বোর্ড গঠন হয়।

বোর্ড কার্যক্রমঃ

  • মাধ্যমিক (SSC) ও উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) পর্যায়ের পরীক্ষার আয়োজন।
  • পাঠ্যক্রম অনুসরণ ও সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি প্রদান ও তদারকি।
  • ফলাফল প্রস্তুত, প্রকাশ ও সার্টিফিকেট প্রদান।

উদাহরণ:
ঢাকা বোর্ড সবচেয়ে বড় এবং দেশের মধ্যে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী এখান থেকেই অংশ নেয়।

আরো পড়ুনঃ
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা: অতীত বনাম বর্তমান ২০২৫

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড

📅 প্রতিষ্ঠা: ১৯৭৮
🔹 আলিয়া মাদ্রাসার দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল পরীক্ষার জন্য বোর্ডটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
🔹 মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও বিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার বিষয় সংযোজন করে।

বোর্ড কার্যক্রমঃ

  • দেশের আলিয়া মাদ্রাসাগুলোর তত্ত্বাবধান করে।
  • দাখিল (SSC সমমান), আলিম (HSC সমমান), ফাযিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) পরীক্ষা পরিচালনা করে।
  • মাদ্রাসার জন্য উপযোগী পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে।

 

⚙️ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB)

📅 প্রতিষ্ঠা: ১৯৬৭
🔹 কারিগরি ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সিস্টেমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে এটি গঠিত হয়।
🔹 বর্তমানে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রেড কোর্সসহ শত শত কারিগরি কোর্স পরিচালনা করে।

বোর্ড কার্যক্রমঃ

  • কারিগরি ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট পরিচালনা এবং তদারকি।
  • ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট কোর্স, ট্রেড কোর্সের পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদান।
  • টেকনিক্যাল ট্রেনিংয়ের মান উন্নয়ন এবং ইন্ডাস্ট্রি-সংশ্লিষ্ট কোর্স প্রবর্তন।

 

সার্বিকভাবে শিক্ষা বোর্ডের মূল কার্যক্রম ও গুরুত্ব

  • বোর্ডগুলো SSC, HSC, দাখিল, আলিম, কারিগরি পরীক্ষা পরিচালনা করে
  • প্রশ্নপত্র তৈরি, ফলাফল প্রকাশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ও তদারকি করে
  • নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, অনলাইন ফলাফল ব্যবস্থা প্রবর্তনে কাজ করে
  • বোর্ডগুলোই দেশব্যাপী শিক্ষা মান নিয়ন্ত্রণের মূল কৌশলগত স্তম্ভ

 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ডিজিটাল অগ্রগতি

  • অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ফলাফল
  • e-SIF (School Information Form), শিক্ষক তথ্যভাণ্ডার
  • অটো স্ক্যানিং ও OMR ভিত্তিক মূল্যায়ন
  • ডিজিটাল প্রশ্ন বিতরণ (অ্যাসেসমেন্ট নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে)
  • কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ডে কর্মমুখী শিক্ষা আরও বিস্তৃত হচ্ছে

 

উপসংহার

বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর ক্রমবিকাশ একটি সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষা পরিচালনার ফলে প্রশাসনিক দক্ষতা, সেবার গতি ও শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা বোর্ড এখন ডিজিটাল ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডের রয়েছে আলাদা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই বোর্ডগুলো শিক্ষার মান, পরীক্ষা, পাঠ্যক্রম ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দু। একটি সুসংহত, দক্ষ ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গঠনের জন্য বোর্ডগুলোর উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশন এখন সময়ের দাবি।

 

FAQ – সাধারণ জিজ্ঞাসা

❓ বাংলাদেশে শিক্ষা বোর্ড কয়টি?

✅ বর্তমানে বাংলাদেশে ১১টি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে — এর মধ্যে ৯টি সাধারণ, ১টি মাদ্রাসা, ও ১টি কারিগরি বোর্ড।

❓ সবচেয়ে পুরনো শিক্ষা বোর্ড কোনটি?

✅ ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে।

❓ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কবে চালু হয়?

✅ ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড চালু হয়।

❓ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কাজ কী?

✅ BTEB (কারিগরি বোর্ড) কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার কোর্স তৈরি, পরিচালনা ও পরীক্ষা নেয়।