metro rail fee_1751696255.jpg

মেট্রোরেলের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা ২০২৫। ঢাকা মেট্রোরেল স্টেশন ও ভাড়া বিস্তারিত

ঢাকা শহর দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের অন্যতম যানজটপূর্ণ নগরী হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় আটকে থেকে কর্মস্থল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীবাসীর যাতায়াতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে মেট্রোরেল। এর মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় অনেক কমে এসেছে। যেমন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও যেতে যেখানে আগে গাড়িতে ১.৫ থেকে ২ ঘণ্টা সময় লাগতো, মেট্রোরেলে সেই পথ এখন মাত্র ২০ মিনিটে অতিক্রম করা সম্ভব হচ্ছে। এতে সময় যেমন বাঁচছে, তেমনি কর্মক্ষমতা ও জীবনের গতি বেড়েছে।

মেট্রোরেল বিদ্যুৎচালিত হওয়ায় এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। যানজটের কারণে যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন হতো, মেট্রোরেল সে জায়গায় বায়ু ও শব্দদূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করছে। একদিকে শহরের জলবায়ুর উন্নতি হচ্ছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমছে। তাছাড়া, নির্দিষ্ট সময়মতো ট্রেন চলায় এটি একটি সময়নিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, যা বাস বা রিকশার মতো অনিশ্চিত যানবাহনের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর জন্য উপকারী। দীর্ঘসময় রাস্তায় আটকে থাকার ফলে যে কর্মঘণ্টা নষ্ট হতো, তা এখন সাশ্রয় হচ্ছে। একইসাথে জ্বালানি খরচও কমে আসছে। এছাড়া প্রতিদিনের যাতায়াত খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও মেট্রোরেল সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, মেট্রোরেল শুধুমাত্র একটি যানবাহন নয়, বরং ঢাকার নাগরিক জীবনের গতি, পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এটি রাজধানীর যানবাহন ব্যবস্থাকে আধুনিক, সচল ও পরিবেশবান্ধব করার পথে এক বড় পদক্ষেপ।

 

ঢাকা মেট্রোরেলের সময়সূচি ও গুরুত্ব 

ঢাকা মহানগরীর তীব্র যানজট নিরসনে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলো মেট্রোরেল। এটি রাজধানীর মানুষের জন্য সময় সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব একটি গণপরিবহন ব্যবস্থা। উচ্চগতিসম্পন্ন এই রেলব্যবস্থা প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীকে নির্দিষ্ট সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করছে। অফিসযাত্রী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতে গতির নতুন মাত্রা যোগ করেছে মেট্রোরেল।

সরকারের "মডার্ন ঢাকা" পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মেট্রোরেল শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম অংশকে সংযুক্ত করবে। ফলে নগরজীবনে চলাচলের বিপ্লব ঘটবে, যা জিডিপি বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মেট্রো রেলের সময়সূচি

মেট্রো রেলের সময়সূচি

 

শনিবার মেট্রোরেলের সময়সূচি ও মতিঝিল থেকে উত্তরা

শনিবার মেট্রোরেলের সময়সূচি ও মতিঝিল থেকে উত্তরা

 

মেট্রোরেলের সময়সূচি শুক্রবার

মেট্রোরেলের সময়সূচি শুক্রবার

 

ঢাকা মেট্রোরেলের সময়সূচি 

🚆 MRT Line-6 (উত্তরা ⇄ মতিঝিল)

বিষয়সময়সূচি
প্রথম ট্রেন ছাড়ে (উত্তরা থেকে)সকাল ৭:১০ মিনিট
শেষ ট্রেন ছাড়ে (উত্তরা থেকে)রাত ৮:৪০ মিনিট
প্রথম ট্রেন ছাড়ে (মতিঝিল থেকে)সকাল ৭:৩০ মিনিট
শেষ ট্রেন ছাড়ে (মতিঝিল থেকে)রাত ৯:০০ মিনিট
ট্রেন চলাচলের ব্যবধানপ্রতি ১০ মিনিট পরপর (পিক আওয়ারে 5–7 মিনিট)
শনিবারসাপ্তাহিক বন্ধ (ট্রেন চলে না)
রবিবার–শুক্রবারনিয়মিত চলাচল

🔹 ট্রেন প্রতি গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় নেয় গড়ে ৩৫–৪০ মিনিট।

 

ঢাকা মেট্রোরেলের ভাড়ার তালিকা 

ঢাকা মেট্রোরেলের ভাড়ার তালিকা

ছবিঃ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)

ঢাকা মেট্রোরেল (MRT Line-6) দূরভিত্তিক ভাড়াপদ্ধতি অনুসরণ করে। ন্যূনতম ভাড়া ৳২০ থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ৳১০০ পর্যন্ত ওঠে, যেখানে প্রতি ২–৩ স্টেশন পর ভাড়া বৃদ্ধি পায়। নিচে একটি সারাংশ দেওয়া হলো:

স্টেশন দূরত্বভাড়া (৳)
1–2 স্টেশন৳২০
প্রতি অতিরিক্ত ২ স্টেশন+৳১০
সর্বোচ্চ৳১০০

 

📌 উদাহরণ হিসেবে:

  • উত্তরা থেকে আগারগাঁও ভাড়া = ৳৬০ 
  • উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া = সর্বোচ্চ ৳১০০ 

কিছু নির্দিষ্ট রুটের ভাড়া (উদাহরণ)

  • উত্তরা নর্থ → আগারগাঁও = ৳৬০ 
  • উত্তরা নর্থ → মতিঝিল (পূর্ণ রুট) = ৳১০০ 
  • শাহবাগ → উত্তরা সেন্টার/নর্থ = ৳৮০ 

 

 টিকিটের ধরনের ভাড়ার বিবরণ

Single Journey Ticket:

  • ভাড়া দূরভিত্তিক (উদাহরণস্বরূপ, সর্বনিম্ন ৳২০, সর্বোচ্চ ৳১০০) 

Smart Card (MRT Pass / Rapid Pass):

  • MRT Pass-এর প্রথম মূল্য ৳৪০০ (এতে ৳২০০ ডিপোজিট ও ৳২০০ ভ্যালু)
  • Rapid Pass-এ প্রথম মূল্য ৳৪০০ (৳৫০–১০০ ডিপোজিটসহ)
  • এই কার্ডের মাধ্যমে যাত্রায় ১০% ছাড় পাওয়া যায় 

বিশেষ ছাড়ের সুবিধা:

  • মুক্তিযোদ্ধা: ফ্রি যাত্রা (প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে)
  • বিশেষজ্ঞ ও প্রতিবন্ধী যাত্রী: ১৫% ছাড় 

 

অতিরিক্ত ও জরিমানা

টিকিট না দেখিয়ে প্রবেশ বা ৬০-মিনিটের সীমা অতিক্রম করলে জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে
সীমার বেশি থাকলে সর্বোচ্চ ভাড়ার দ্বিগুণ অর্থাৎ ৳২০০ জরিমানা ধার্য হতে পারে 

সারাংশ:

  • বেসিক ভাড়া: ৳২০–৳১০০ (দূরভিত্তিক)
  • Smart Card সুবিধা: ১০% ছাড় + সহজ লেনদেন 
  • বোনাস: মুক্তিযোদ্ধা ফ্রি, প্রতিবন্ধীদের জন্য ছাড়

 

📍 উল্লেখযোগ্য স্টেশনসমূহ (Line-6):

  1. উত্তরা (উত্তরা নর্থ, সেন্টার, সাউথ)
  2. পল্লবী
  3. মিরপুর-১১
  4. মিরপুর-১০
  5. কাজীপাড়া
  6. শেওড়াপাড়া
  7. আগারগাঁও
  8. ফার্মগেট
  9. কারওয়ান বাজার
  10. শাহবাগ
  11. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  12. সচিবালয়
  13. মতিঝিল

 

নিরাপত্তা ও আধুনিকতা

মেট্রোরেলে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় টিকিটিং সিস্টেম (Rabbit Card), নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি, প্ল্যাটফর্ম গেট ও ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা। প্রতিটি স্টেশনে এলিভেটেড প্ল্যাটফর্ম, এস্কেলেটর ও লিফটের সুবিধাও রয়েছে।

মেট্রোরেলের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা – প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQ)

❓ ঢাকা মেট্রোরেল কতটায় শুরু হয়?

উত্তর: ঢাকা মেট্রোরেলের প্রথম ট্রেন উত্তরা থেকে ছেড়ে যায় সকাল ৭:১০ মিনিটে, এবং মতিঝিল থেকে ছেড়ে যায় সকাল ৭:৩০ মিনিটে

❓ মেট্রোরেলের শেষ ট্রেন কবে ছাড়ে?

উত্তর: উত্তরা থেকে শেষ ট্রেন ছেড়ে যায় রাত ৮:৪০ মিনিটে, আর মতিঝিল থেকে রাত ৯:০০ মিনিটে

❓ মেট্রোরেল সপ্তাহে কয়দিন চলে?

উত্তর: মেট্রোরেল রবিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত চলে। শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ, ট্রেন চলে না।

❓ মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর মধ্যে ভাড়া কত?

উত্তর: ঢাকা মেট্রোরেল দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করে।

  • ন্যূনতম ভাড়া: ৳২০
  • সর্বোচ্চ ভাড়া: ৳১০০
    প্রতি ২–৩ স্টেশন পরপর ভাড়া গড়ে ৳১০ করে বাড়ে

❓ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া কত?

উত্তর: উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পূর্ণ রুটে যাত্রার জন্য ভাড়া ৳১০০

❓ মেট্রোরেলে কি Smart Card ব্যবহার করা যায়?

উত্তর: হ্যাঁ, Smart Card (MRT Pass / Rapid Pass) ব্যবহার করা যায়। এতে ১০% পর্যন্ত ভাড়ায় ছাড় পাওয়া যায়।

❓ মুক্তিযোদ্ধা বা প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো ছাড় আছে?

  • উত্তর: হ্যাঁ,
  • মুক্তিযোদ্ধারা সম্পূর্ণ ফ্রি ভ্রমণ করতে পারেন।
  • প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যাত্রীদের জন্য ১৫% পর্যন্ত ছাড় রয়েছে।

❓ মেট্রোরেলে জরিমানার নিয়ম আছে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, সময়সীমা অতিক্রম করলে বা টিকিট ছাড়া প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ ৳২০০ জরিমানা হতে পারে।