padma setu toll koto taka_1751685554.jpg

পদ্মা সেতুর টোল কত বছর নেওয়া হবে ও কত টাকা উঠছে? জানুন বিস্তারিত হিসাব ২০২৫

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত ঋণচুক্তি অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর নির্মাণ খরচ (প্রায় ৩১ হাজার ১৯৩ কোটি) এবং ঋণের সুদসমেত আনুমানিক ৩৬ হাজার কোটি টাকার ফেরতের জন্য ৩৫ বছরের সময় ধার্য করা হয়েছে ।

ঋণের পরিশোধ হবে ১৪০ কিস্তিতে, যা প্রতি বছর ৪ কিস্তি করে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে (প্রায় ৩৫ বছর) চলবে ।

ফলে ২০৫৭ সাল নাগাদ এই পুরো অর্থ সেতু থেকে আদায়কৃত টোল দিয়ে পরিশোধ সম্পন্ন হওয়ার কথা ।

 

পদ্মা সেতুর ঋণ কে দিয়েছে এবং কত টাকা?

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক প্রকল্প, তবে বাস্তবতা হলো—এই বিশাল ব্যয়ের একটি বড় অংশই এসেছে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে। প্রকল্পের জন্য সরাসরি কোনো বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীর অর্থায়ন না থাকলেও, বাংলাদেশ সরকার নিজেই সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ প্রদান করেছে, যা পরিশোধযোগ্য শর্তে ছিল।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থ বিভাগ পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় পুরো টাকাই বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ আকারে দিয়েছে। এই ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৯,৮৯৩ কোটি টাকা, যা স্বল্পসুদে এবং দীর্ঘমেয়াদি কিস্তির ভিত্তিতে ফেরত দেওয়ার শর্তে নির্ধারিত হয়েছে। এছাড়াও, সেতুর ডিজাইন খাতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ADB) থেকে নেওয়া হয়েছে প্রায় SDR 17.45 মিলিয়ন, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২১৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ। এই ডিজাইন ঋণ ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে পরিশোধের কথা রয়েছে।

সেতুর নির্মাণ ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মোট ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৩০,১৯৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা অনুদান (গ্রান্ট) হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি সবই ঋণ। এই ঋণ শোধ করার জন্য সরকার ও সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে – ৩৫ বছরে (১৪০ কিস্তিতে) পুরো টাকা এবং সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। প্রতি বছর ৪টি করে কিস্তি প্রদান করতে হবে, যা শুরু হয়েছে অর্থবছর ২০২২-২৩ থেকে এবং চলবে ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর পর্যন্ত।

এই পুরো ঋণ শোধ করা হবে পদ্মা সেতু থেকে সংগৃহীত টোল রাজস্ব দিয়ে। অর্থাৎ, জনগণের দেওয়া টোলের মাধ্যমেই ধাপে ধাপে পরিশোধ হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয়। এটি একদিকে যেমন জাতীয় সক্ষমতার প্রতীক, তেমনি সুপরিকল্পিত ঋণ ব্যবস্থাপনার এক সফল উদাহরণ।

 

পদ্মা সেতুর মোট ঋণ কারা দিছে?

  • সরকার (অর্থ বিভাগ) — বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে এক পর্যায় ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে।
  • আশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ADB) — সেতুর ডিজাইনিং খাতে প্রায় SDR 17.45 মিলিয়ন (প্রায় ৳215 কোটি) ঋণ দিয়েছে, যা ২০ বছরের মেয়াদে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ৬০ কিস্তিতে ফেরত দিতে হবে ।

 

পদ্মা সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় ও ঋণ হিসাব 

পদ্মা সেতুর মোট নির্মাণ

✅ ১. মোট নির্মাণ ব্যয়

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৩০,১৯৩ কোটি টাকা

✅ ২. এই টাকা এসেছে কোথা থেকে?

উৎসপরিমাণ
➤ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব ঋণ (সেতু কর্তৃপক্ষকে দেওয়া)২৯,৮৯৩ কোটি টাকা
➤ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ADB) ডিজাইন খাতে ঋণ~২১৫ কোটি টাকা
➤ অনুদান (Grant)৩০০ কোটি টাকা
মোট~৩০,৪০৮ কোটি টাকা

 

🔹 👉 তাহলে সেতু নির্মাণের জন্য মোট তহবিল দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রায় ৯৮% টাকাই ঋণ

✅ ৩. ঋণ কিভাবে শোধ করা হবে?

  • এই সব ঋণ পদ্মা সেতু থেকে তোলা টোলের টাকায় ধাপে ধাপে শোধ করা হবে।
  • শোধ করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ৩৫ বছর (২০২২ থেকে ২০৫৭ সাল পর্যন্ত)
  • প্রতি বছর ৪টি করে কিস্তি, মোট ১৪০টি কিস্তিতে শোধ করতে হবে।

 

✅ ৪. এখন পর্যন্ত (জুন ২০২৪ পর্যন্ত) কতটা শোধ হয়েছে?

  • এখন পর্যন্ত ৮টি কিস্তি দেওয়া হয়েছে
  • টাকার অঙ্কে শোধ হয়েছে প্রায় ৳১,২৬২.৬৬ কোটি টাকা
  • মার্কিন ডলারে আনুমানিক ১০ কোটি ডলার এর মতো

 

২. পদ্মা সেতুর ঋণের পরিমাণ

উপলক্ষপরিমাণ
নির্মাণ ব্যয়≈ ৳30,193 কোটি
এইটুডি-টোটাল ঋণ (স্বল্প সুদে)≈ ৳29,893 কোটি
গ্রান্ট৳300 কোটি
ADB ডিজাইন ঋণপ্রায় ৳215 কোটি (SDR 17.45 মিলিয়ন সমভাড়া)

 

👉 অর্থাৎ, সেতুর প্রায় পুরো নির্মাণ ব্যয়ই ঋণের মাধ্যমে অনুদানপুষ্ট হয়েছে। নির্মাণ ব্যয় + সুদ মিলিয়ে মোট ঋণ শোধ করতে হবে ৩৫ বছরে, ১৪০ কিস্তিতে।

🗓️ পদ্মা সেতুর টোল কত বছর নেওয়া হবে?

মেয়াদ: ৩৫ বছর (১৪০ কিস্তি, প্রতি বছর ৪ কিস্তি)

শুরুর সাল: অর্থবছর ২০২২-২৩ থেকে

শেষ সময়: ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর পর্যন্ত (সম্ভবত জুন ২০৫৭ নাগাদ)

 

পদ্মা সেতুর টোল কত টাকা উঠছে?

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত মোট টোল আয়ে পৌঁছেছে ৳২,৫০৪.৬৭ কোটি, যা সেতু কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

📊 বিস্তারিত বিশ্লেষণ:

বছরযানবাহন সংখ্যাটোল রাজস্ব
১ম বছর (জুন ২০২2–জুনি 2023)56.95লাখ৳৭৯৮.৬১ কোটি dhakatribune.com
২য় বছর68.01লাখ৳৮৫০.৪৪ কোটি
৩য় বছর (জুন 2024–মধ্যে)69.95লাখ৳৮৬১.২২ কোটি

মোট ৩ বছরে — 19,47,1692 যানবাহন পারাপার করে ṭōl আয় হয়েছে ৳২,৫০৪.৬৭ কোটি

 

 সাম্প্রতিক একদিনের রেকর্ড

  • ৫ জুন ২০২৫, মাত্র একদিনে টোল আয় হয়েছে ৳৫.৪৩ কোটি, যা সেতুর সর্বোচ্চ দৈনিক সংগ্রহ ।
  • সর্বোচ্চ দৈনিক টোল সংগ্রহের আগের রেকর্ড ছিল ৳৪.৮৯ কোটি (৯ এপ্রিল ২০২৪) ।

 

বিস্তারিত পড়ুনঃ
পদ্মা সেতুর টোল হালনাগাদ 2025 ও গাড়ি চলাচলের নতুন নিয়মাবলি

প্রথম কিছু কিস্তির পরিশোধের তথ্য (২০২৩–২০২৪)

পদ্মা সেতুর নির্মাণে ব্যবহৃত ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে। চুক্তি অনুযায়ী, বছরে ৪টি করে মোট ১৪০টি কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা হবে। নিচে প্রথম কয়েকটি কিস্তির পরিমাণ ও সময় উল্লেখ করা হলো:

  • প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি: ৳৩১৬.৯০ কোটি (মে ২০২৩)
  • তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি: ৳৩১৬.০২ কোটি (জুন ২০২৩)
  • পঞ্চম ও ষষ্ঠ কিস্তি: ৳৩১৫.০৭ কোটি (ডিসেম্বর ২০২৩)
  • সপ্তম ও অষ্টম কিস্তি: ৳৩১৪.৬৪ কোটি (জুন ২০২৪)

➡️ মোট শোধিত ঋণ (জুন ২০২৪ পর্যন্ত): প্রায় ৳১,২৬২.৭ কোটি টাকা

 

বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো, আমাদের অহংকার, গর্ব, সক্ষমতা ও মর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় পুরো অর্থ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। ২০২২ সালের ২৬ জুলাই সরকারের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সংশোধিত ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ১৬ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে ৪টি কিস্তি করে সর্বমোট ১৪০টি কিস্তিতে সুদ-আসল পরিশোধ করা হবে।

এই অর্থ সম্পূর্ণভাবে পদ্মা সেতু থেকে সংগৃহীত টোল রাজস্ব থেকেই পরিশোধ করা হয়েছে। ধারাবাহিক এই কিস্তি প্রদানের মাধ্যমে সরকার ৩৫ বছরের মধ্যে পূর্ণ ঋণ শোধের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

✅ সারাংশ

  • মোট নির্মাণ ব্যয়: ≈ ৳30,193 কোটি
  • ঋণ (স্বল্প সুদে): ≈ ৳29,893 কোটি
  • ডিজাইন ঋণ (ADB): SDR 17.45 মিলিয়ন (~৳215 কোটি)
  • গ্রান্ট:৳300 কোটি
  • ঋণ শোধকাল: ৩৫ বছর (২০২২–৫৭)
  • মোট কিস্তি সংখ্যা: ১৪০ (প্রতি বছর ৪টি)
  • ২০২৪ জুন অবস্থায় শোধিত কিস্তি: ~১০ কোটি ডলার

শোধ গুরুত্ব: সকল ঋণ টোল রাজস্ব থেকেই আদায় করে শোধ করা হবে

 

সারাংশ:

  • টোল সংগ্রহের সময়কাল: ৩৫ বছর
  • মোদ্দা টোল আদায়কৃত অর্থ ব্যবহৃত হবে: ঋণ পরিশোধ + সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ব্যয়
  • সম্ভাব্য চূড়ান্ত সময়: ~২০৫৭ সাল

💡 সুতরাং, প্রতিটি যাত্রী বা চালকের পেছনে যে টোল দেওয়া হচ্ছে, তা শুধু সেতু পারাপার নয়—এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত ব্যয় উত্তোলনের অংশ, যা আগামী ৩৫ বছরে পূরণ হবে।
 


❓ পদ্মা সেতু নিয়ে প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQ)

❓ পদ্মা সেতুর টোল কত টাকা?

উত্তর: টোল গাড়িভেদে ভিন্ন। যেমন:

মোটরসাইকেল – ৳১০০

প্রাইভেট কার/জিপ – ৳৭৫০

মাইক্রোবাস – ৳১,৩০০

পিকআপ – ৳১,২০০

মিনিবাস – ৳১,৪০০

বড় বাস – ৳২,০০০

ট্রাক (৩ টন পর্যন্ত) – ৳১,৬০০

বড় ট্রাক – সর্বোচ্চ ৳৬,০০০

❓ পদ্মা সেতুর টোল কত বছর নেওয়া হবে?

উত্তর: সরকারি চুক্তি অনুযায়ী, পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় চলবে ৩৫ বছর (২০২২ সাল থেকে ২০৫৭ সাল পর্যন্ত)। এই সময়কালে সেতুর নির্মাণ ঋণ পরিশোধ করা হবে।

❓ পদ্মা সেতুর নির্মাণে মোট কত টাকা খরচ হয়েছে?

উত্তর: পদ্মা সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৳৩০,১৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ঋণ।

❓ এই সেতুর জন্য কে ঋণ দিয়েছে?

উত্তর: বাংলাদেশ সরকার নিজের অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়েছে, যার পরিমাণ ছিল ৳২৯,৮৯৩ কোটি। এছাড়া ডিজাইন খাতে ADB (Asian Development Bank) দিয়েছে প্রায় ৳২১৫ কোটি। এবং সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান হিসেবে ছিল ৳৩০০ কোটি

❓ এই ঋণ কিভাবে ও কত কিস্তিতে শোধ হবে?

উত্তর: এই ঋণ পরিশোধ হবে ১৪০টি কিস্তিতে, যা ৩৫ বছরে, প্রতি বছর ৪টি করে কিস্তি হিসেবে দেওয়া হবে। ঋণের টাকা শোধ হচ্ছে সেতু থেকে আদায়কৃত টোলের মাধ্যমেই।

❓ এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু থেকে কত টাকা আয় হয়েছে?

উত্তর: ২০২২ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত পদ্মা সেতু থেকে মোট ৳২,৫০৪.৬৭ কোটি টাকার টোল আদায় হয়েছে। এ সময় পার হয়েছে প্রায় ১.৯৭ কোটি যানবাহন

❓ পদ্মা সেতু চালুর পর ঋণ কতটুকু শোধ হয়েছে?

উত্তর: ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৮টি কিস্তিতে মোট ৳১,২৬২.৬৬ কোটি টাকা শোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভ্যাট হিসেবে পরিশোধ হয়েছে আরও ৳২২৪.২৩ কোটি

❓ পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের কী উপকার হয়েছে?

উত্তর: সেতুটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ সহজ করেছে। সময় ও জ্বালানি সাশ্রয় হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জাতীয় জিডিপি-তে ১.২% প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।