BD-Pratidin_2024-02-08-11_1750682643.jpg

কিশোর অপরাধ কি? আইনে তার শাস্তি কি? জানুন বিস্তারিত

কিশোর অপরাধ বলতে এমন কোনো অপরাধ বোঝানো হয় যা ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশু বা কিশোর দ্বারা সংঘটিত হয়। এদেরকে আইনগতভাবে “শিশু অপরাধী” বলা হয়। সাধারণ অপরাধীদের মতো এদের বিচার ও শাস্তি হয় না।

এ ধরনের অপরাধের জন্য তারা শিশু অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তাদের বিচার হয় শিশু আদালত-এ বিশেষ পদ্ধতিতে।

 

কিশোর অপরাধ কাকে বলে?

শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, “১৮ বছরের নিচে যেকোনো শিশু যদি কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে, তাকে কিশোর অপরাধী হিসেবে ধরা হয়।”

কিশোর অপরাধ (Juvenile Delinquency) বলতে বোঝায়—একজন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু বা কিশোর যখন এমন কোনো আইনভঙ্গকারী কাজ করে, যা সাধারণভাবে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

 

অন্যভাবে বললে কিশোর অপরাধ হলোঃ

১৮ বছরের কম বয়সী কেউ যদি চুরি, ছিনতাই, হত্যা, মাদক বহন, ধর্ষণ, ইভটিজিং, মারামারি, বা অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধ করে, তাহলে সেটি কিশোর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী  কিশোর অপরাধ:

শিশু আইন, ২০১৩ (Children Act 2013) অনুযায়ী:

"১৮ বছরের কম বয়সী যে কোনো ব্যক্তি যদি কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে, তাহলে তাকে শিশু অপরাধী বা কিশোর অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে।"

 

কিশোর অপরাধীর বৈশিষ্ট্য:

  • বয়স: ১০–১৮ বছরের মধ্যে
  • কাজ: যে কাজটি দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধ
  • বিচার: সাধারণ আদালতে নয়, বরং শিশু আদালতে বিচার হয়
  • উদ্দেশ্য: তাকে শাস্তি নয়, বরং সংশোধনের সুযোগ দেওয়া

 

❓কেন কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে?

বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ বাড়ছে দিন দিন। এর পিছনে কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  • অভিভাবকদের নজরদারির অভাব
  • 📱 অতিরিক্ত মোবাইল/ইন্টারনেট ব্যবহার ও নেগেটিভ কনটেন্ট
  • 👫 খারাপ বন্ধুর প্রভাব
  • 🧠 মানসিক চাপ, অবহেলা বা শারীরিক নির্যাতন
  • 💸 অর্থনৈতিক অভাব ও বেকারত্ব
  • 🎬 সিনেমা/টিকটক/গ্যাং কালচারে প্রভাবিত হওয়া

 

⚖️ কিশোর অপরাধে আইনি শাস্তি কী?

বাংলাদেশে ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ অপরাধ করলে তাকে সাধারণ অপরাধীর মতো বিচার করা হয় না। বরং তার বিচার হয় “শিশু আইন, ২০১৩” অনুযায়ী। এদের বিচার হয় শিশু আদালতে এবং শাস্তিও হয় সংশোধনমূলক

📘 বাংলাদেশে শিশু অপরাধীর জন্য প্রচলিত আইন:

👉 শিশু আইন, ২০১৩ (Children Act, 2013)

  • এ আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কোনো শিশুকে—
  • মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দেওয়া নিষিদ্ধ
  • অপরাধ করলে তার বিচার হয় শিশু আদালতে
  • শাস্তি হয় সংশোধনের মাধ্যমে, যেমন:
  1. সংশোধনাগারে পাঠানো
  2. কাউন্সেলিং
  3. অভিভাবকের জিম্মায় প্রদান
  4. কমিউনিটি সার্ভিস
  5. মানসিক স্বাস্থ্য সেবা

আরো পড়ুনঃ
ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (IVAC/VFS):কি & কোথায়? ২০২৫ আপডেট

 

🧒 কিশোর অপরাধে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে?

অপরাধের ধরনসম্ভাব্য ব্যবস্থা
চুরি, মারামারি, ইভটিজিংসংশোধনাগারে ৩–৬ মাস বা অভিভাবকের হেফাজতে
ছিনতাই, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসংশোধনাগারে ১–৩ বছর পর্যন্ত
হত্যা বা ধর্ষণবিশেষ শিশু আদালতে বিচার, সংশোধনাগারে ৫–১০ বছর পর্যন্ত (মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী)

 

কিশোর অপরাধে  অভিভাবক ও সমাজের করণীয় কী?

✅ কিশোর অপরাধ ঠেকাতে শুধু আইন নয়, দরকার পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত উদ্যোগ।

🔹 পরিবারের দায়িত্ব:

সন্তানের আচরণে নজর রাখা

ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া

বন্ধুবান্ধবের সাথে সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করা

🔹 স্কুল ও সমাজের ভূমিকা:

গ্যাং কালচার বিরোধী প্রচার

স্কুলে নৈতিক শিক্ষার ক্লাস চালু

খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাড়ানো

🔹 রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব:

সামাজিক সচেতনতা ক্যাম্পেইন

শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা

গরিব শিশুদের জন্য উপার্জনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা

 

উপসংহার
কিশোর অপরাধ সমাজের জন্য একটি বিপজ্জনক সংকেত। তবে শিশুরা অপরাধী হয়ে জন্মায় না—পরিবেশ, অবহেলা ও সমাজের ব্যর্থতা তাদের অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। আইন শুধু শাস্তি নয়, তাদের সংশোধনের সুযোগ দেয়। তাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র মিলে কাজ করলেই এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান সম্ভব।