
জুমার নামাজের নিয়ত, রাকাত সংখ্যা ও ফজিলত - Sothikpath.com
ইসলাম ধর্মে সপ্তাহের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন দিন হলো জুমার দিন। এই দিনটি মুসলমানদের জন্য একটি সাপ্তাহিক ঈদের মতো। জুমার নামাজ শুধু একটি ফরজ ইবাদতই নয়, বরং এটি হৃদয় ও সমাজের পরিশুদ্ধির মাধ্যম। এদিনে মুসলিমরা সম্মিলিতভাবে ইমামের পেছনে জুমার নামাজ আদায় করে থাকেন। আজকের এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো জুমার নামাজের সঠিক নিয়ত, রাকাত সংখ্যা এবং জুমার দিনের অসাধারণ ফজিলত সম্পর্কে।
জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। এটি শুধু একটি সাপ্তাহিক নামাজই নয়, বরং একটি ঈদের মতো দিন বলা হয়েছে হাদিসে। নিচে জুমার নামাজের নিয়ত, রাকাত সংখ্যা, এবং জুমার দিনের ফজিলত বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
জুমার নামাজের নিয়ত (বাংলা উচ্চারণসহ)
কুরআন-হাদিসে নিয়তের নির্দেশ আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট বাক্য নেই:
🔸 রাসূল ﷺ বলেন:
"নিয়ত ছাড়া কোনো আমল গ্রহণযোগ্য নয়।"
📚 — সহীহ বুখারি: ১, সহীহ মুসলিম: ১৯০৭
(إنما الأعمال بالنيات)
🔹 অর্থাৎ নিয়ত হলো অন্তরের ইচ্ছা। মুখে না বললেও মনে মনে নিয়ত করলে যথেষ্ট।
🔸 বাংলায় আপনি অন্তরের ইচ্ছা করতে পারেন:
আমি আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে দু’ রাকাত জুমার নামাজ ইমামের অনুসরণে আদায় করার নিয়ত করলাম।
নামাজের নিয়ত বিস্তারিত পড়ুনঃ
নামাজের নিয়ত কোন দোয়া পড়তে হয় - হাদীসের আলোকে সঠিক জানুন। না জানার কারণে আমল বরবাদ হচ্ছে না তো?
জুমার নামাজের রাকাত সংখ্যা
নামাজ | রাকাত | ধরন |
---|---|---|
জুমার ফরজ | ২ রাকাত | জামাআতে (ইমামের পেছনে) |
জুমার আগে সুন্নাত | ৪ রাকাত | মুয়াক্কাদাহ (প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত) |
জুমার পরে সুন্নাত | ৪ রাকাত | মুয়াক্কাদাহ (২+২ বা একসাথে ৪) |
অতিরিক্ত | ২ রাকাত | নফল/অতিরিক্ত (কেউ কেউ পড়ে থাকেন) |
🔹 সর্বমোট: সাধারণভাবে ১০ রাকাত (৪ সুন্নাত + ২ ফরজ + ৪ সুন্নাত)
📘 ১০ রাকাত হাদিসের রেফারেন্স:
১. জুমার আগে ৪ রাকাত সুন্নাত
এটি সুন্নাতে মু’আক্কাদাহ। অনেক সাহাবি তা নিয়মিত আদায় করতেন।
▶️ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন:
“আমি কখনো রাসূল (ﷺ)-এর সাথে ৪ রাকাত জুমার পূর্বে এবং ২ রাকাত পরে নামাজ পড়তে অবহেলা করিনি।”
📚 — মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক: ৫৫৭৪
২. জুমার ফরজ – ২ রাকাত ইমামের পেছনে
এটি সরাসরি আল-কুরআনে আদিষ্ট:
“যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও।”
📚 — সূরা জুমু’আ (৬২:৯)
🎯 এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এ নামাজ ইমামের পেছনে ২ রাকাত জামাআতের সঙ্গে আদায় করতে হবে।
হাদিস :
"যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, তারপর যায় এবং ইমামের খুতবা শোনে ও চুপ থাকে, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”
📚 — সহীহ বুখারি: ৮৮৩, সহীহ মুসলিম: ৮৫৭
৩. জুমার পরে ৪ রাকাত সুন্নাত (২+২)
হাদিস:
▶️ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:
"যে কেউ জুমার নামাজ পড়ে, সে যেন তা পরে ৪ রাকাত (সুন্নাত) পড়ে।"
📚 — সহীহ মুসলিম: ৮৮১
⏩ অনেক ফকীহ বলেন, ২+২ করে দুই সালামে আদায় করাই উত্তম।
৪. অতিরিক্ত ২ রাকাত নফল নামাজ (ইচ্ছাধীন)
এটি বাধ্যতামূলক নয়, বরং আল্লাহর কাছে নৈকট্যের ইচ্ছায় আদায়যোগ্য নফল ইবাদত।
রেফারেন্স:
▶️ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
"বান্দা যত বেশি নফল ইবাদত করবে, আল্লাহর নিকট তার মর্যাদা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।"
📚 — সহীহ বুখারি: ৬১৪৭
জুমার দিনের ফজিলত
📜 কুরআনের আলোকে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ
[সূরা জুমু'আ: ৯]
"হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা পরিত্যাগ কর।"
— (সূরা জুমু'আ: ৯)
📘 হাদিসের আলোকে:
✅ ১. জুমার দিন ঈদের দিনের মত ফজিলতপূর্ণ:
"জুমার দিন মুসলমানদের জন্য শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনেই দুনিয়া থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।"
— সহীহ মুসলিম: ৮৫৪
✅ ২. গুনাহ মাফ হয়:
"যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, সুন্দরভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তাড়াতাড়ি মসজিদে আসে এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনে—তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত যেসব গুনাহ হয়েছে তা মাফ করে দেয়া হয়।"
— সহীহ মুসলিম: ৮৫৭
✅ ৩. জুমার দিনে একটি বিশেষ মুহূর্ত থাকে:
"জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যেখানে কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা অবশ্যই কবুল হয়।"
— সহীহ বুখারি ও মুসলিম
আরো পড়ুনঃ
জুমার দিনের আমল ,ফজিলত ও সকল সুন্নাহ সহ বিস্তারিত জানুন
📌 গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
জুমার দিনের সকালে গোসল করা সুন্নাত।
ভালো কাপড় পরা, সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব।
সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা সাওয়াবের কাজ।
দেরি না করে আগেভাগে মসজিদে যাওয়া উচিত।
✅ সংক্ষেপে মনে রাখুন:
নিয়ত: ২ রাকাত জুমার নামাজ, ইমামের অনুসরণে।
রাকাত সংখ্যা: মোট ১০ (৪+২+৪)
ফজিলত: গুনাহ মাফ, দোয়া কবুল, জান্নাতের প্রতিশ্রুতি।
জুমার নামাজ শুধু একটি ধর্মীয় বিধান নয়, বরং মুসলমানদের সামাজিক ঐক্য ও আত্মিক উন্নতির প্রতীক। নিয়মিতভাবে জুমার নামাজ আদায় করার মাধ্যমে একজন মুমিন তার পাপ মোচন, দোয়া কবুল এবং জান্নাতের পথে অগ্রসর হতে পারে। আসুন, আমরা সবাই জুমার দিনকে মর্যাদা দেই এবং সঠিকভাবে এর আমলগুলো পালন করি।
📲 শেয়ার করুন:
এই গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক তথ্যটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। হোক সকলের জন্য হিদায়াত ও নাজাতের পথ।
মন্তব্য করুন
Your email address will not be published.