kishor-aporadh-protirodhe-karoniya_1750703064.jpg

কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে করণীয় | পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা

কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরিবারই প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর। একটি শিশুর নৈতিক শিক্ষা, আচরণ, আত্মবিশ্বাস ও ন্যায়বোধ গড়ে ওঠে মূলত পারিবারিক পরিবেশে। অভিভাবক যদি সন্তানের প্রতি যথাযথ নজরদারি ও ভালোবাসা প্রদর্শন না করেন, তাহলে শিশু সহজেই নেগেটিভ বন্ধুদের প্রভাবে গ্যাং, সহিংসতা বা মাদকাসক্তির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য বাবা-মা’র উচিত সন্তানের মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া, তাদের মনের কথা শোনার পরিবেশ তৈরি করা এবং কার সঙ্গে মিশছে বা কোথায় যাচ্ছে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা। অতিরিক্ত শাসনের পরিবর্তে সহানুভূতিশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং ভুল পথে যাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

ইসলামে শিশুদের নৈতিক ও আত্মিক গঠনের উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিশোর বয়সেই মানুষ ভালো ও মন্দের পার্থক্য শেখে, আর ধর্মই তাকে ন্যায় ও অন্যায়ের সীমানা চিনিয়ে দেয়। ইসলাম অনুযায়ী, শিশুকে ৭ বছর বয়স থেকেই নামাজের আদেশ দেওয়া উচিত এবং ১০ বছর বয়সে নিয়মিতভাবে তা শেখাতে উৎসাহ দেওয়া জরুরি। ধর্মীয় শিক্ষা একজন কিশোরকে গুনাহ, গর্ব, হিংসা, লোভ ইত্যাদি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। মসজিদভিত্তিক ক্লাস, হালকা ইসলামি আলোচনা, এবং সমাজে দ্বীনদার মানুষের সাহচর্য একজন কিশোরের হৃদয়ে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে। ফলে সে গ্যাং, মাদক বা ইভটিজিংয়ের মতো গুনাহে না জড়িয়ে, সৎ পথে চলার অনুপ্রেরণা পায়।

বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ দিন দিন বাড়ছে। কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব? জানুন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের করণীয় এবং ইসলামি দৃষ্টিকোণ।

বর্তমান সময়ে কিশোর অপরাধ শুধু আইনগত নয়, একটি বড় সামাজিক সংকট। মারামারি, ছিনতাই, ইভটিজিং, গ্যাং-ভিত্তিক সহিংসতা—এসব অপরাধে ১৫–১৮ বছর বয়সী কিশোরদের সম্পৃক্ততা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।

📈 ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালসহ শহরাঞ্চলে “কিশোর গ্যাং” এখন অন্যতম ভয়াবহ সমস্যা। তাই শুধু বিচার নয়, প্রতিরোধই হতে হবে মূল কৌশল।

 

কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে করণীয়

🏠 ১. পরিবারের করণীয়:

পরিবার হচ্ছে একটি শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। তাই সঠিক গাইডলাইন ও তত্ত্বাবধান না থাকলে কিশোর বয়সে সে সহজেই ভুল পথে যেতে পারে।

✅ করণীয়:

  • 📵 সন্তানের মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ
  • 🕌 ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা
  • 🗣️ নিয়মিত মনের কথা শোনার পরিবেশ তৈরি করা
  • 👬 সন্তানের বন্ধুবান্ধবের সাথে সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করা
  • 🤝 বাবা-মার মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা
  • 😡 অতিরিক্ত শাসন নয়, ভালোবাসা ও আলোচনার মাধ্যমে শাসন

রাসুল (সা.) বলেন:
“তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের সবাইকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাব দিতে হবে।”
(সহীহ বুখারী, হাদিস: ৮৯৩)

 

আরো পড়ুনঃ
কিশোর অপরাধ কি? আইনে তার শাস্তি কি? জানুন বিস্তারিত

🏫 ২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয়:

স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা কিশোরদের চরিত্র গঠনে বড় ভূমিকা রাখে।

✅ করণীয়:

  • 📚 নৈতিক শিক্ষা (Moral Education) চালু করা
  • 👨‍🏫 শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীর বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে তোলা
  • 🧠 স্কুলে কাউন্সেলিং সেবা চালু করা
  • 📢 গ্যাং, মাদক ও ইভটিজিং বিরোধী সচেতনতামূলক ক্লাস
  • 🏀 খেলাধুলা, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত রাখা

🕌 ৩. ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে করণীয়:

ইসলামে কিশোরদের সঠিকপথে রাখার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। ইসলাম মানুষকে শিশু বয়স থেকেই নৈতিকভাবে গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে।

✅ করণীয়:

  • শিশুকে ৭ বছর বয়স থেকেই নামাজের অভ্যাসে উৎসাহিত করা
  • কুরআনের সহীহ শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের গুরুত্ব বোঝানো
  • গুনাহ ও পাপ থেকে বাঁচার জন্য দোয়া শেখানো
  • কিশোরদের মসজিদভিত্তিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা

🏙️ ৪. সমাজের করণীয়:

একটি অসুস্থ সমাজ কিশোরদের অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। তাই কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক উদ্যোগ অপরিহার্য।

✅ করণীয়:

  • 🛑 পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গঠন রোধে এলাকাবাসীর নজরদারি
  • 🏀 স্থানীয় খেলাধুলা ও চর্চা কেন্দ্র চালু করা
  • 📢 নিয়মিত সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো
  • 🎭 ধর্মীয় ও সংস্কৃতিমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন
  • 🚔 স্থানীয় থানা বা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অপরাধপ্রবণ কিশোরদের চিহ্নিত করা

🏛️ ৫. রাষ্ট্র ও প্রশাসনের করণীয়:

রাষ্ট্রীয়ভাবে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

✅ করণীয়:

  • 📋 শিশু আইন ২০১৩-এর যথাযথ বাস্তবায়ন
  • 🏫 সংশোধনাগারের মানোন্নয়ন – যেন কিশোররা শিক্ষা ও কাউন্সেলিং পায়
  • 🧠 মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সহজলভ্য করা
  • 📶 সামাজিক মাধ্যম (TikTok, YouTube)-এর নেগেটিভ কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ
  • 💼 দরিদ্র শিশুদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ইনকামের ব্যবস্থা

 

বিশেষ বার্তা:

“একটি শিশু যখন অপরাধে জড়ায়, তখন তা তার ব্যর্থতা নয়—সমাজের ব্যর্থতা।”
কিশোরদের শাস্তি নয়, সংশোধন ও সঠিক পথ দেখানোই হোক আমাদের মূল লক্ষ্য।

 

উপসংহার:

✅ কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে একক কোনো উদ্যোগ যথেষ্ট নয়।
👨‍👩‍👧‍👦 পরিবার → 🏫 শিক্ষা প্রতিষ্ঠান → 🏙️ সমাজ → 🏛️ রাষ্ট্র – সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
🕌 ইসলামি মূল্যবোধ, প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, ভালোবাসা ও নজরদারির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।