
তাহাজ্জুদ নামাজ: সময়, ফজিলত, নিয়ত, মর্যাদা ও ফজিলত
তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলাম ধর্মে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত, যেটা রাতের গভীরে ঘুম ভেঙে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে পড়া হয়। এটি আল্লাহর কাছে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলার এক অনন্য সুযোগ। তাহাজ্জুদের নামাজ একটি মহামূল্যবান নফল ইবাদত। এটি শুধুমাত্র আখিরাতের পাথেয় নয়, বরং আত্মার প্রশান্তি ও জীবনের বরকতের অন্যতম চাবিকাঠি। যারা আল্লাহর নৈকট্য পেতে চান, তাদের জন্য তাহাজ্জুদ একটি বিশেষ উপহার। এই নামাজ রাতে নির্জনে, নিঃশব্দ পরিবেশে হয়, যা একান্তভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করার শ্রেষ্ঠ সময়।
“রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশে আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন: কে আছে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আছে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দিব? কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?”
— (বুখারী, মুসলিম)
তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত
১. আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভ
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا
“আর রাতের একাংশে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করো, এটা তোমার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত মর্যাদার (মাকাম মাহমুদ) স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।”
📖 (সূরা বনি ইসরাঈল - ১৭:৭৯)
২. হাদিসের বর্ণনা:
রাসূল (সা.) বলেছেন:
"রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ্ পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আছে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো?"
📘 (বুখারী ও মুসলিম)
৩. দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়
রাতের শেষভাগে করা দোয়া বেশি কবুল হয়। তাই তখন আল্লাহর কাছে চাওয়া অত্যন্ত বরকতময়।
৪. গুনাহ মাফ ও জান্নাতের সুসংবাদ
“রাতের নামাজ জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়।”
📘 (তিরমিযী)
৫. রাসূল (সা.) এর অভ্যাস
নবীজি (সা.) কখনো তাহাজ্জুদ বাদ দিতেন না। এটি ছিল তাঁর জীবনের অংশ।
তাহাজ্জুদ নামাজের বিশেষ ফজিলত
✅ দোয়া কবুল হয়
✅ গুনাহ মাফ হয়
✅ আত্মার প্রশান্তি আসে
✅ আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়
✅ জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা লাভ হয়
রাসূল (সা.) বলেন:
“তোমরা রাতের সালাত আদায় করো, কেননা তা ছিল সৎকর্মশীলদের অভ্যাস। এটা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম, গুনাহর প্রক্ষালন এবং পাপ থেকে বিরত রাখে।”
📘 (তিরমিযী: ৩৫৪৯)
তাহাজ্জুদের সময় কখন?
তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা যায় ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত। তবে সবচেয়ে উত্তম সময় হল:
🕛 রাতের শেষ তৃতীয়াংশ (সেহরির সময়ের কাছাকাছি)
📌 এই সময় আল্লাহ্ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন:
"কোনো ইবাদতকারী আছে কি, যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব?"
📘 (সহীহ বুখারী)
তাহাজ্জুদের নামাজ কিভাবে পড়বেন?
✅ রাকাআত সংখ্যা:
সর্বনিম্ন: ২ রাকাআত
সর্বাধিক: ৮-১২ রাকাআত
প্রতিটি ২ রাকাআত করে সালাম ফিরিয়ে আদায় করা উত্তম
শেষে ১ বা ৩ রাকাআত উইত্র নামাজ পড়া উত্তম
তাহাজ্জুদের নিয়ত (নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে করণীয়):
তাহাজ্জুদ নফল নামাজ হওয়ায় এর জন্য নির্দিষ্ট নিয়তের বাক্য নেই। তবে মনে মনে এইরকম নিয়ত করতে পারেন:
"আমি দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নামাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আদায় করছি।"
👉 নিয়ত বাংলায় মনে মনে করলেই হবে।
তাহাজ্জুদের দোয়া
তাহাজ্জুদের সময় করা দোয়া অধিক কবুল হয়। চাইলে এই দোয়াটি পড়তে পারেন:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ، دِقَّهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلاَنِيَتَهُ وَسِرَّهُ
উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মাগফিরলি যাম্বি কুল্লাহু, দিককাহু ওয়া জিল্লাহু, ওয়া আওয়্বালাহু ওয়া আখিরাহু, ওয়া আলানিয়াতাহু ওয়া সিররাহু”
📘 (মুসলিম: ৪৮৩)
তাহাজ্জুদের রাকাআত সংখ্যা ও পদ্ধতি
সর্বনিম্ন: ২ রাকাআত
সর্বাধিক: ৮ বা ১২ রাকাআত (সুন্নত নয়, নফল বিধায় সীমাবদ্ধতা নেই)
প্রতিটি ২ রাকাআত করে সালাম ফিরিয়ে আদায় করা উত্তম
শেষে ১ বা ৩ রাকাআত উইত্র পড়া মুস্তাহাব
তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ার টিপস
ঘুমানোর আগে নিয়ত করুন
মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করুন
কমপক্ষে ২ রাকাআত দিয়ে শুরু করুন
ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত করুন
উপসংহার
তাহাজ্জুদের নামাজ আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার এক মহান সুযোগ। নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করলে অন্তরে প্রশান্তি আসে, গুনাহ মোচন হয়, এবং আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তাই আসুন, আজ রাত থেকেই এই বরকতময় ইবাদতে অভ্যস্ত হই।
মন্তব্য করুন
Your email address will not be published.