nofol rojar niyot fojilot_1750226240.jpg

নফল রোজার নিয়ত ও ফজিলত

নফল রোজার গুরুত্ব ইসলামে অত্যন্ত বিশাল ও মর্যাদাপূর্ণ। এটি ফরজ রোজার পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যারা নফল রোজা রাখে, আল্লাহ তাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন এবং তাদের পাপ মোচন করেন।

 

নফল রোজার গুরুত্ব, ফজিলত ও মর্যাদা

১. আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম

নফল রোজা মানুষের ইমানকে মজবুত করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে।

হাদিস:

আল্লাহ বলেন,
"আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালবাসি।"
— (সহীহ বুখারী: ৬৫০২)

২. গুনাহ মোচনের উপায়

নফল রোজা ছোট গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়।

হাদিস:

“আশাকরি, আশুরার রোজার মাধ্যমে আগের বছরের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে।”
— (মুসলিম: ১১৬২)

৩. জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপত্তা

“যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর রাস্তায় রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে ৭০ বছরের দূরত্বে রাখবেন।”
— (বুখারী: ২৮৪০)

৪. রোজাদারের জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজা

“জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম ‘রাইয়ান’। কিয়ামতের দিন কেবল রোজাদাররাই সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে।”
— (বুখারী: ১৭৯৭, মুসলিম: ১১৫২)

৫. সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজার গুরুত্ব

“এই দুই দিনে মানুষের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়, আমি চাই, যখন আমার আমল পেশ হবে তখন আমি রোজাদার থাকি।”
— (তিরমিযি: ৭৪৭)

 

নফল রোজার বাংলা নিয়ত (নিয়তের শব্দ ও সময়)

নফল রোজার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দীর্ঘ নিয়তের প্রয়োজন নেই। ছোট করে মনে মনে নিয়ত করলেই যথেষ্ট। তবে মুখে উচ্চারণ করতেও পারেন।

 

নিয়তের সময়:

রাতের বেলা: সূর্যোদয়ের আগে নিয়ত করা উত্তম।

দিনে নিয়ত করা: যদি কেউ সাহরী না খেয়েও সকালে (যখনো খাওয়া-দাওয়া করেনি) নফল রোজার নিয়ত করে নেয়, তাহলেও রোজা সহিহ হবে ইনশাআল্লাহ।

নিয়তের সহজ উচ্চারণ:

نَوَيْتُ أَنْ أَصُوْمَ صَوْمًا لِلّٰهِ تَعَالٰى
উচ্চারণ: "নওয়াইতু আন আছুমা ছাওমান লিল্লাহি তা'আলা"
অর্থ: আমি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার নিয়ত করলাম।

 

নফল রোজার ফজিলত

নফল রোজা রাখা খুবই ফজিলতপূর্ণ। এতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়, পাপ মোচন হয় এবং জান্নাতের পথ সহজ হয়।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীসসমূহ:

১. নফল রোজার মাধ্যমে পাপ মোচন

“যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর রাস্তায় রোযা রাখে, আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখবেন।”
— (সহীহ বুখারী: 2840, সহীহ মুসলিম: 1153)

২. সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা

“মানুষের আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় সোম ও বৃহস্পতিবার। আমি চাই, আমার আমল যখন পেশ করা হবে, তখন আমি রোযাদার থাকি।”
— (তিরমিযি: 747)

৩. আরাফার দিন (৯ জিলহজ্জ) রোজা

“আমি আশা করি, আল্লাহ এ (আরাফা) রোজার মাধ্যমে গত বছরের এবং আগত বছরের পাপ মোচন করে দিবেন।”
— (সহীহ মুসলিম: 1162)

৪. আশুরার রোজা (১০ মহররম)

“আশাকরি, এ রোযার মাধ্যমে আগের বছরের (ছোট) গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে।”
— (সহীহ মুসলিম: 1162)

 

📅 বিভিন্ন নফল রোজার তালিকা

দিনফজিলত
প্রতি সোমবাররাসূল ﷺ এর জন্ম ও ওহি শুরু হয় এ দিনে
প্রতি বৃহস্পতিবারআমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ হয়
আরাফার দিনগত ও আগত বছরের গুনাহ মোচন হয়
আশুরার দিনআগের বছরের পাপ মোচন হয়
শবেমেরাজ/শবেবরাত/আশহুরা ইত্যাদিবিশেষ ফজিলতপূর্ণ রাতের পরের দিনগুলো
প্রতি হিজরী মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখআয়াম-বিদ রোজা বলা হয়, ফজিলত রয়েছে

 

নফল রোজার নিষিদ্ধ দিনসমূহ

দিনকারণ
দুই ঈদের দিন (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা)হাদীসে নিষিদ্ধ
তাশরীক-এর ১১, ১২, ১৩ জিলহজ্জকুরবানি ও খাওয়াদাওয়ার দিন

 

 উপসংহার:

নফল রোজা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অতিরিক্ত ইবাদত। এর মাধ্যমে মাফ, নৈকট্য, জান্নাত ও অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। সময়মতো নিয়ত করে রাখলে এটি আখিরাতের পাথেয় হয়ে দাঁড়াবে।