rojar gurutto fazilat_1750226240.jpg

রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

রোজা (আরবি: صوم) হল আত্মসংযম ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের একটি পবিত্র ইবাদত। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম, যা প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মুসলমানের জন্য ফরজ করা হয়েছে। রোজা বা সিয়াম হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। এর মাধ্যমে একজন মুসলিম সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে আত্মসংযম পালন করে। 

 

কোরআনে রোজার গুরুত্ব

 

১. ফরজ বিধান — সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৩

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

উচ্চারণ:
"ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম লাআল্লাকুম তাত্তাকুন।"

বাংলা অনুবাদ:
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো।"
📚 সূরা আল-বাকারা: ১৮৩

🔸 এই আয়াতটি রোজার মূল উদ্দেশ্য ও গুরুত্বকে প্রকাশ করে: তাকওয়া অর্জন। এটি আত্মনিয়ন্ত্রণ, পরহেযগারি এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম।

২. রমজান ও কোরআনের সম্পর্ক — সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৫

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ

বাংলা অনুবাদ:
"রমজান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য পথনির্দেশ, হিদায়াত ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট প্রমাণ।"
📚 সূরা আল-বাকারা: ১৮৫

🔸 রমজান কেবল রোজার মাস নয়, বরং এটি কোরআন নাজিলের মাস। এ কারণে এর ফজিলত আরও বেশি।

৩. রোজাদারের জন্য আলাদা প্রতিদান — সূরা যুমার, আয়াত ১০

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ

বাংলা অনুবাদ:
"নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের প্রতিদান দেয়া হবে অগণিতভাবে।"
📚 সূরা যুমার: ১০

🔸 রোজা একটি ধৈর্য ও সংযমের ইবাদত। এজন্য রোজাদারের জন্য আছে অসীম সওয়াব।

৪. নেক আমলের গুরুত্ব বাড়ে — সূরা বাকারা: ১৮৬

রোজার প্রসঙ্গে আয়াতের ধারাবাহিকতায় আল্লাহ বলেন:

"আমি বান্দার ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে।"
📚 সূরা বাকারা: ১৮৬

🔸 রোজার মাসে আল্লাহর প্রতি দোয়া, ইবাদত, ও ক্ষমা চাওয়ায় বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন:

"হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।"
📚 সূরা বাকারা: আয়াত ১৮৩

🔹 এই আয়াতে বোঝা যায়, রোজার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করা।

 

হাদীসে রোজার ফজিলত

 

আরো পড়ুনঃ
সকাল ও সন্ধ্যার ২০টি জরুরি দোয়া (আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও হাদিসসহ)

 

১. জান্নাতের একটি বিশেষ দরজা — “রয়ান”

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

"জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রয়ান। কিয়ামতের দিন সেই দরজা দিয়ে কেবল রোজাদাররাই প্রবেশ করবে।"
— (সহীহ বুখারী: ১৮৯৬)

২. রোজা আল্লাহর জন্য

"আদম সন্তানের প্রত্যেক কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।"
— (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

রোজা হল এমন একটি ইবাদত, যা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, এবং এর প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন।

৩. পাপ মোচনের মাধ্যম

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।"
— (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

৪. দোয়া কবুল হওয়ার সময়

রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময় কবুল হয়। হাদীসে এসেছে:

"তিনজনের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না… তাদের মধ্যে একজন হল রোজাদার ব্যক্তি, যখন সে ইফতার করে।"
— (তিরমিজি: ২৫২৫)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

"যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।"
📚 সহিহ বুখারি: ৩৮

🔸 অন্য এক হাদীসে এসেছে:

"রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম।"
📚 সহিহ বুখারি ও মুসলিম

 

রোজার উপকারিতা ও ফজিলত

 

আরো পড়ুনঃ
সকাল ও সন্ধ্যার ২০টি জরুরি দোয়া (আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও হাদিসসহ)

 

১. আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযম

রোজা মানুষকে ধৈর্য, সংযম এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়।

২. তাকওয়া অর্জন

রোজা তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। একজন রোজাদার নিজে থেকে গুনাহ থেকে বিরত থাকে।

৩. জান্নাতের দরজা “রাইয়্যান” শুধু রোজাদারদের জন্য

“জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম ‘রাইয়্যান’। কিয়ামতের দিন শুধুমাত্র রোজাদাররাই ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে।”
📚 সহিহ বুখারি: ১৮৯৬

৪. রমজান মাসে নাজিল হয়েছে কোরআন

রমজান এমন একটি বরকতময় মাস যাতে আল-কুরআন নাযিল হয়েছে। এতে রয়েছে আল্লাহর পথনির্দেশ।

৫. দোয়া কবুলের মাস

রোজারত অবস্থায় এবং ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়।

 

রোজার সামাজিক উপকারিতা

গরীব-দুঃখীদের কষ্ট অনুধাবন

সমাজে সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি

অন্যায় ও অপরাধ থেকে বিরত থাকা

 

রোজা ভঙ্গের কারণ ও করণীয়

ইচ্ছাকৃত খাওয়া-দাওয়া, পান করা, সহবাস

মিথ্যা কথা, গীবত, অপবিত্রতা রোজার ফজিলত নষ্ট করে

✅ করণীয়: ইখলাস সহকারে রোজা রাখা, দোয়া, ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত বৃদ্ধি করা

 

উপসংহার

রোজা কেবল একটি নির্দিষ্ট সময় না খাওয়ার নাম নয় — বরং এটি আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কোরআন ও হাদীসে রোজার অসংখ্য ফজিলত ও প্রতিদান বর্ণিত হয়েছে। আমাদের উচিত রমজান মাসকে পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে জান্নাতের পথ সুগম করা।