al aqsa aksa quraner ayat_1750423140.jpg

আল-আকসা মসজিদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র মসজিদ হলো আল-আকসা মসজিদ। এটি শুধু একটি ইবাদতের স্থান নয়, বরং ইসলামী ইতিহাস, নবীদের স্মৃতি, ফজিলত ও আধ্যাত্মিকতার এক অপরিহার্য কেন্দ্র। ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত এই মসজিদটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইসরা ও মেরাজ, প্রথম কিবলা এবং অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা।

আল-আকসা মসজিদ সম্পর্কে কুরআনে একটি সরাসরি আয়াত রয়েছে — সূরা আল-ইসরা বা বনী ইসরাইল–এর প্রথম আয়াতে। এটি একটি ঐতিহাসিক, আধ্যাত্মিক এবং ইসলামি বিশ্বাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

 

আল-আকসা মসজিদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

সূরা আল-ইসরা – আয়াত ১

سُبْحَـٰنَ ٱلَّذِىٓ أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِۦ لَيْلًۭا مِّنَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ إِلَى ٱلْمَسْجِدِ ٱلْأَقْصَى ٱلَّذِى بَـٰرَكْنَا حَوْلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنْ ءَايَـٰتِنَآ ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْبَصِيرُ

বাংলা অনুবাদ:

“পবিত্র ও মহিমান্বিত সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে (মুহাম্মদ ﷺ কে) এক রাতে ভ্রমণ করালেন মসজিদুল হারাম (কাবা) থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত — যার চারপাশে আমি বরকত রেখেছি — যাতে আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শুনেন এবং দেখেন।”

📖 সূরা আল-ইসরা (১৭:১)

বিস্তারিত  পড়ুনঃ 
নামাজ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত — নামেজের গুরুত্ব ও বিস্তারিত আলোচনা

আল-ইসরা – আয়াত ১ ব্যাখ্যা ও গুরুত্ব

মসজিদুল আকসা হচ্ছে মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র স্থান (মসজিদুল হারাম ও নববীর পর)।

এখানে থেকেই ইসরা ও মেরাজ রাতের যাত্রা শুরু হয়েছিল — যা রাসূল ﷺ–এর সবচেয়ে অলৌকিক ঘটনা।

আয়াতে বলা হয়েছে, এ স্থানটি “باركنا حوله” — “যার চারপাশে বরকত রাখা হয়েছে” — অর্থাৎ এ জায়গা এবং এর আশপাশ আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত মূল্যবান।

এটি ছিল প্রথম কিবলা — মুসলিমরা প্রথমে এই মসজিদের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন।

 

এই আয়াতের মাধ্যমে আল-আকসার ৩টি দিক উঠে আসে:

  • এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ
  • এর চারপাশ বরকতময়
  • এটি ছিল ইসরা ও মেরাজের যাত্রাস্থল
  •  

আল-আকসার গুরুত্ব ইসলামে:

প্রথম কিবলা (প্রথম দিক যা মুসলিমরা নামাজে মুখ করত)

ইসরা ও মেরাজের যাত্রাস্থল

বহু নবী ও সাহাবিদের কর্মক্ষেত্র ও শহীদস্থান

কিয়ামতের আগ মুহূর্তে ঈসা (আ.) এখানেই নামবেন বলে হাদীসে এসেছে

 

আল-আকসা মসজিদের ইতিহাস

নির্মাণকাল:
ইসলামী ইতিহাস মতে, কাবার পরে পৃথিবীর দ্বিতীয় মসজিদ হিসেবে আল-আকসা নির্মিত হয়।
রাসূল ﷺ বলেন:

“কাবা নির্মাণের ৪০ বছর পর আল-আকসা নির্মাণ করা হয়।”
📚 সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫২০

নবীদের স্মৃতি:
এখানে অনেক নবী আল্লাহর ইবাদত করেছেন। ঈসা (আ.), দাঊদ (আ.) ও সুলায়মান (আ.)–এর সাথে এই স্থান সরাসরি সম্পৃক্ত।

ইসরা ও মেরাজ:
রাসূল ﷺ মক্কা থেকে মিরাকলভাবে আল-আকসা যান এবং সেখান থেকে আসমানে মেরাজ করেন। সকল নবীদের ইমাম হিসেবে সালাত আদায় করেন।

প্রথম কিবলা:
মুসলিমরা প্রথম দিকে এই মসজিদের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন। পরে কিবলা পরিবর্তন করে কাবা শরীফ নির্ধারিত হয়।

 

আল-আকসার ফজিলত

তৃতীয় পবিত্র মসজিদ:
কেবল তিনটি মসজিদে সফরের জন্য বিশেষ ফজিলত রয়েছে: মসজিদুল হারাম, নববী এবং আল-আকসা।
📚 সহীহ বুখারী, হাদীস: ১১৮৯

এক নামাজ = ৫০০ নামাজের সমান:
অনেকে হাদীস থেকে বলেন আল-আকসায় একটি নামাজ ৫০০ গুণ সওয়াবের সমান (বিশেষ মতভেদ রয়েছে, তবে সম্মান নির্দিষ্ট)।

বিস্তারিত  পড়ুনঃ 
 কুরআনের আলোকে বিবাহ: নিছক সামাজিক চুক্তি নয়, বরং ইবাদত

জিহাদের কেন্দ্র:
বহু সাহাবি ও ইসলামী সেনাপতি এই স্থান রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে জীবন দিয়েছেন।

 

বর্তমান অবস্থা ও দুঃখজনক বাস্তবতা

ইহুদি আগ্রাসন:
আল-আকসা বর্তমানে ইসরায়েলি দখলে রয়েছে। সেখানে নিয়মিত আগ্রাসন, নামাজে বাধা এবং মুসলিমদের হয়রানি চলছে।

বিতর্কিত খননকাজ ও ধ্বংস পরিকল্পনা:
বহুবার চেষ্টা হয়েছে এই মসজিদ ভেঙে সেখানে “তৃতীয় টেম্পল” নির্মাণের। এর মাধ্যমে মুসলিমদের ঈমানী রক্ত গরম হয়ে ওঠে।

ফিলিস্তিনিদের নিপীড়ন:
প্রতিদিন ফজরের নামাজে মুসল্লিদের বাধা দেওয়া, গ্রেফতার, এমনকি শহীদ করার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটছে।

 

আল-আকসা কেবল একটি মসজিদ নয় — এটি মুসলিমদের আধ্যাত্মিক পরিচয়ের অংশ, ইমানের অংশ।
এই মসজিদের রক্ষা করা, ভালোবাসা, স্মরণ ও ফজিলতের আলোচনা করা আমাদের ঈমানের দাবি।

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে আল-আকসার প্রেমে উদ্বুদ্ধ করুন এবং একদিন সেখানে সালাত আদায় করার সৌভাগ্য দিন — আমিন।

 

📣 পাঠকের প্রতি বার্তা:

🕊️ “আল-আকসা কেবল ফিলিস্তিনিদের নয় — এটি সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ইমানী দায়
আসুন, কলমে, দোয়ায় ও চেতনায় এই পবিত্র মসজিদের পাশে দাঁড়াই।”

এই গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক তথ্যটি নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। আপনার বন্ধু-পরিজনদের সাথেও শেয়ার করুন, যেন তারাও সঠিক নিয়তের মাধ্যমে ইবাদত করে।
হোক এটি সকলের হিদায়াত ও নাজাতের সোপান।

 

❓ আল-আকসা মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্ন ১: আল-আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত?

উত্তর:
আল-আকসা মসজিদ ফিলিস্তিনের জেরুজালেম ( القدس ) শহরে অবস্থিত। এটি পুরাতন জেরুজালেম শহরের পুর্বাংশে অবস্থিত, যেটিকে মুসলিমরা “বাইতুল মুকাদ্দাস” নামেও চিনে।

প্রশ্ন ২: আল-আকসা মসজিদ কুরআনের কোন আয়াতে এসেছে?

উত্তর:
সূরা আল-ইসরা (১৭:১)–এ আল-আকসা মসজিদের নাম এসেছে:

"মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়" — ইসরা ও মেরাজের আয়াত।

প্রশ্ন ৩: আল-আকসা কি মুসলিমদের প্রথম কিবলা?

উত্তর:
জি হ্যাঁ।
ইসলামের শুরুর দিকে মুসলিমরা আল-আকসা মসজিদের দিকেই মুখ করে নামাজ পড়তেন। পরে কিবলা কাবা শরীফের দিকে পরিবর্তিত হয়।

প্রশ্ন ৪: কেন আল-আকসা এত গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর:

  • এটি প্রথম কিবলা
  • মেরাজের যাত্রাস্থল
  • বহু নবী ও সাহাবিদের ইবাদতস্থান
  • কুরআনে ও হাদীসে প্রশংসিত
  • তিনটি পবিত্র মসজিদের অন্যতম

প্রশ্ন ৫: আল-আকসায় নামাজের বিশেষ ফজিলত কী?

উত্তর:
হাদীসে এসেছে, আল-আকসা মসজিদে এক রাকাত নামাজের সওয়াব অন্যত্র ৫০০ গুণের সমান (কিছু বর্ণনায় ২৫০ বা ১০০০ বলা হয়েছে)।
📚 (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকি, তাবারানী)

প্রশ্ন ৬: বর্তমানে আল-আকসা কার নিয়ন্ত্রণে?

উত্তর:
বর্তমানে আল-আকসা ইসরায়েলি দখলে রয়েছে, তবে এর অভ্যন্তরীণ প্রশাসন পরিচালনা করে ওয়াকফ বোর্ড (ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ)
তবে সেখানে মুসলিমদের উপর নিয়মিত হামলা ও বাধা দেওয়া হয়।