
কুরআনের আলোকে বিবাহ: নিছক সামাজিক চুক্তি নয়, বরং ইবাদত
বিবাহ (নিকাহ) ইসলামে একটি পবিত্র ও সম্মানজনক বন্ধন। এটি কেবল সামাজিক বা আইনগত চুক্তি নয়, বরং এক মহান ইবাদত ও রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বিবাহের গুরুত্ব, উদ্দেশ্য ও বিধান সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।
কুরআনের আয়াতে বিবাহের গুরুত্ব
১. বিবাহ শান্তির মাধ্যম
وَمِنْ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَٰجًۭا لِّتَسْكُنُوٓا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةًۭ وَرَحْمَةً
বাংলা অর্থ:
“তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি হলো— তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে জীবনসঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।”
📚 সূরা আর-রূম – আয়াত ২১
🔹 ফজিলত: বিবাহ মানেই প্রশান্তি, ভালোবাসা ও আল্লাহর রহমতের একটি মাধ্যম।
২. বিবাহ পবিত্রতা রক্ষার উপায়
وَأَنكِحُوا۟ ٱلْأَيَـٰمَىٰ مِنكُمْ وَٱلصَّـٰلِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَآئِكُمْ ۚ إِن يَكُونُوا۟ فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ
বাংলা অর্থ:
“তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ, তাদের বিবাহ দাও। তারা দরিদ্র হলেও আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করবেন।”
📚 সূরা আন-নূর – আয়াত ৩২
🔹 বার্তা: দারিদ্র্য বিবাহে প্রতিবন্ধক নয়। বরং বিবাহের মাধ্যমে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেন।
৩. বিবাহ ব্যভিচার থেকে রক্ষা করে
وَلَا تَقْرَبُوا۟ ٱلزِّنَىٰٓ ۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَـٰحِشَةًۭ وَسَآءَ سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
“ব্যভিচারের ধারে-কাছেও যেও না। এটা অত্যন্ত অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।”
📚 সূরা আল-ইসরা – আয়াত ৩২
🔹 সংকেত: বিবাহ মানুষকে হারাম সম্পর্ক ও সমাজিক বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করে।
হাদীসে বিবাহের ফজিলত
রাসূল ﷺ বলেন:
"বিবাহ আমার সুন্নাহ, আর যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার উম্মত নয়।”
📚 সহীহ বুখারী ও মুসলিম
আরও বলেন:
“যে ব্যক্তি বিবাহ করলো, সে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করলো। এরপর যেন সে আল্লাহকে ভয় করে বাকি অর্ধেকের জন্য।”
📚 তাবারানী, হাদীস: ১০৪৩
ইসলামে বিবাহের উদ্দেশ্য
নৈতিক পবিত্রতা অর্জন
পরস্পরের প্রতি দয়া ও দায়িত্বশীলতা
সন্তান লাভ ও মানব জাতির বংশধারা রক্ষা
দুনিয়া ও আখিরাতের সঙ্গী নির্বাচন
সুন্নাহ পালন ও ইবাদতের নিয়তে জীবনের অংশ বানানো
অবিবাহিত থাকার অজুহাত নয়:
অনেকেই অর্থের অভাব, প্রতিষ্ঠা না পাওয়া, “আসলে সময় হয়নি” ইত্যাদি বলে বিলম্ব করে। অথচ আল্লাহ কুরআনে বলেন,
“তারা যদি গরিব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দিবেন।” (সূরা নূর – ৩২)
🔹 তাই সঠিক সময়, সঠিক নিয়ত ও দ্বীনি প্রাধান্য দিয়ে বিবাহে অগ্রসর হওয়া উচিত।
উপসংহার:
বিবাহ ইসলামে একটি মহান ইবাদত, যা মানুষকে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তি দেয়। কুরআন-হাদীসের আলোকে বিবাহ জীবনের নিরাপদ, হালাল ও পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি পথ।
আসুন, আমরা ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিবাহকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলি এবং সমাজকে শুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন করি।
ভুল নয়, সত্য জানুন সঠিকপথ থেকে — SothikPath.com
📣 পাঠকের প্রতি আহ্বান:
💑 “বিবাহ করুন দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করার জন্য, সুন্নাহ পালনের জন্য – শুধু সামাজিক কারণে নয়।”
🕌 আপনার বিবাহ হোক হালাল, সহজ ও ইসলামের পথে।
❓ FAQ: বিবাহ সম্পর্কে কুরআনের আলোকে
প্রশ্ন ১: কুরআনে বিবাহের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আয়াত কোনটি?
উত্তর:
সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য আয়াত হলো:
“তোমাদের জন্য তিনি তোমাদের মধ্য থেকে জীবনসঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা প্রশান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।”
📚 সূরা আর-রূম – আয়াত ২১
প্রশ্ন ২: ইসলাম অনুযায়ী বিবাহ কী শুধু সামাজিক চুক্তি?
উত্তর:
না। বিবাহ শুধু সামাজিক বা পারিবারিক চুক্তি নয়, বরং এটি একটি ইবাদত এবং রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ।
প্রশ্ন ৩: কুরআনে কি বলা হয়েছে দারিদ্র্যের কারণে বিবাহ বিলম্ব না করতে?
উত্তর:
জি হ্যাঁ।
আল্লাহ বলেন:
“তারা যদি গরিব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দিবেন।”
📚 সূরা আন-নূর – আয়াত ৩২
প্রশ্ন ৪: বিবাহ না করলে কি গোনাহ হবে?
উত্তর:
যদি কেউ সক্ষম হয়, কুপ্রবৃত্তির আশঙ্কা থাকে, তবুও বিবাহ না করে — তাহলে তা গোনাহের আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। রাসূল (সা.) বলেন:
“বিবাহ আমার সুন্নাহ; যে তা পরিত্যাগ করে, সে আমার উম্মত নয়।”
📚 সহীহ বুখারী ও মুসলিম
প্রশ্ন ৫: ইসলাম কি প্রেম করে বিবাহ সমর্থন করে?
উত্তর:
ইসলাম অবৈধ প্রেমকে সমর্থন করে না। তবে হালাল ও সম্মানজনক উপায়ে — অভিভাবকের সম্মতি ও শরীয়তের সীমারেখায় — পছন্দনীয় কাউকে বিবাহ করা বৈধ।
প্রশ্ন ৬: বিবাহের মাধ্যমে কি দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয়?
উত্তর:
জি হ্যাঁ।
রাসূল (সা.) বলেন:
“যে বিবাহ করলো, সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করলো। এরপর যেন সে আল্লাহকে ভয় করে বাকি অর্ধেকের জন্য।”
📚 তাবারানী
প্রশ্ন ৭: কীভাবে একটি ইসলামসম্মত বিবাহ সম্পন্ন করা উচিত?
উত্তর:
১. অভিভাবকের অনুমতি
২. বর-কনের সম্মতি
৩. সাক্ষী
৪. মহর (ডাউরি)
৫. জনসম্মুখে ঘোষণার মাধ্যমে (ওয়ালিমা)
একটি শেয়ার, একটি হিদায়াত — হয়তো কোনো ভাই বা বোনের নামাজ আজ থেকে সহীহ হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।
মন্তব্য করুন
Your email address will not be published.