pach wakto namaz tasbih_1750160565.jpg

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাসবিহ: আরবি, বাংলা উচ্চারণ, ফজিলত ও উপকারিতা

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পর কিছু নির্দিষ্ট তাসবিহ বা যিকির করা সুন্নাত ও বরকতময় আমল। এগুলো আল্লাহর স্মরণ বাড়ায়, গুনাহ মোচন করে, দোয়া কবুলের দরজা খুলে দেয়। রাসুল (সা.) নিজে এই তাসবিহগুলো পড়তেন এবং সাহাবিদের পড়তে উৎসাহিত করতেন।

 

নামাজের পর যে তাসবিহগুলো পড়া উত্তম:

১. আস্তাগফিরুল্লাহ – ৩ বার

আরবি: أَسْتَغْفِرُ اللّٰه
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।

📚 সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৯১
➡️ রাসুল (সা.) নামাজ শেষে ৩ বার “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলতেন।

 

২. আয়াতুল কুরসী – ১ বার

আরবি:
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ...
📚 সূরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫

ফজিলত:

“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তার জান্নাতে প্রবেশে কোনো কিছু বাধা হবে না।”
📚 নাসাঈ: ৯৯২, সহীহ হাদীস

৩. সুবহানাল্লাহ – আলহামদুলিল্লাহ – আল্লাহু আকবার

তাসবিহ ফাতিমি নামে পরিচিত।

সুবহানাল্লাহ – ৩৩ বার

আলহামদুলিল্লাহ – ৩৩ বার

আল্লাহু আকবার – ৩৪ বার

📚 সহীহ মুসলিম: ৫৯৭
➡️ রাসুল (সা.) বলেন, এটি ঘুমের আগে এবং নামাজের পর পড়া অত্যন্ত ফজিলতময়।

 

আরো পড়ুনঃ
সকাল ও সন্ধ্যার ২০টি জরুরি দোয়া (আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও হাদিসসহ)

 

হাদিস ১: রাসুল (সা.) এর দান করা সেরা যিকির

হাদিস:
রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কন্যা ফাতিমা (রাঃ) ও জামাতা আলী (রাঃ) কে বললেন:

“তোমরা কি চাই না, আমি তোমাদের এমন কিছু শেখাই, যা তোমরা কোন খেদমতদার থেকেও উত্তম মনে করবে?
তোমরা প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ও ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে।”

📚 সহীহ বুখারী: ৩৭০৫, সহীহ মুসলিম: ২৭২৭
➡️ রাসুল (সা.) এটিকে দুনিয়ার চাকর-খেদমতের চেয়েও উত্তম বলে আখ্যায়িত করেন।

 

হাদিস ২: জান্নাতের ধনভাণ্ডার

“তোমরা কি এমন কিছু shall not I inform you of something that is a treasure from the treasures of Paradise?”
(রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:) বলো:
‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’”

📚 সহীহ মুসলিম: ২৬৯৫
➡️ এই যিকিরগুলো জান্নাতের খাজানার অন্তর্ভুক্ত।

 

হাদিস ৩: সর্বোত্তম যিকির

“সর্বোত্তম যিকির হল: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, আর সর্বোত্তম দোয়া হল: ‘আলহামদুলিল্লাহ’। আর ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ আসমান ও জমিনকে পরিপূর্ণ করে দেয়।”

📚 তিরমিজি: ৩৫৮৫, সহীহ হাদিস
➡️ এগুলো পড়লে আমলনামা ভারী হয়ে যায়।

 

আরো পড়ুনঃ

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত - অর্থ, উচ্চারণ ও ফজিলত
 

৪. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু... – ১ বার

আরবি:
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণ:
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ও হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদির।

অর্থ:
আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই, রাজত্ব ও প্রশংসা শুধুই তার, তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

📚 সহীহ মুসলিম: ৫৯৪
➡️ এটি পড়লে একশো নেকি লেখা হয়, একশো গোনাহ মাফ হয়।

 

৫. দোয়া মাসুরা / মুক্তাসার দোয়া

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالإِكْرَامِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আন্তাস্ সালাম ওয়া মিনকাস্ সালাম, তাবারাকতা ইয়াযাল জলালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি শান্তি, আপনার কাছ থেকেই শান্তি আসে, আপনি বড়ই বরকতময়, হে মহিমাময় ও সম্মানিত সত্তা।

📚 সহীহ মুসলিম: ৫৯১

 

নামাজের পর তাসবিহ পড়ার উপকারিতা:

✅ গুনাহ মোচন হয়
✅ জান্নাত লাভের উপায়
✅ অন্তর প্রশান্ত হয়
✅ দোয়া কবুল হয়
✅ আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়
✅ ফরজ নামাযের ঘাটতি পূরণ হয়

 

ছোটদের ও নতুনদের জন্য সহজভাবে মনে রাখার কৌশল:

✳️ ৩৩-৩৩-৩৪ = সুবহানাল্লাহ + আলহামদুলিল্লাহ + আল্লাহু আকবার
✳️ আয়াতুল কুরসী একবার
✳️ আস্তাগফিরুল্লাহ তিনবার
✳️ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু…” একবার
✳️ “আন্তাস সালাম…” একবার

 

নামাজ শেষ মানেই ইবাদত শেষ নয়। বরং এর পরের যিকির-তাসবিহই আমাদের আমলনামাকে ভারী করে। আসুন, প্রতিটি নামাযের পর নিয়মিত এই যিকিরগুলো পড়ি এবং আল্লাহর রহমতের চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে নেই।

**আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন — আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।**